স্বদেশ ডেস্ক:
ক্যাসিনো ব্রাদার্স এনামুল হক এনু ও রুপন ভুঁইয়ার পৃষ্ঠপোষক ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক জয় গোপালকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। সম্প্রতি তাকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে জানিয়েছে সংস্থাটি। ক্যাসিনোর বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানের সময় থেকে দীর্ঘ ৯ মাস তিনি আত্মগোপনে ছিলেন। এনু-রুপনের উত্থানের পেছনে এই জয় গোপালের সব ধরনের সহযোগিতা ছিল। ক্যাসিনোর আয় থেকে প্রতিদিন একটি অংশ পেতেন জয় গোপাল। গতকাল মঙ্গলবার সিআইডির কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে সিআইডির অর্গানাইজড ক্রাইম বিভাগের ডিআইজি ইমতিয়াজ আহমেদ এসব তথ্য জানান।
ডিআইজি ইমতিয়াজ বলেন, ক্যাসিনো ব্রাদার্স এনু-রুপনের বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে। তাদের বিরুদ্ধে এক সপ্তাহের মধ্যেই চার্জশিট দেওয়া হবে। তাদের নামে ৯১টি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট রয়েছে। এসব অ্যাকাউন্টে জমা হয়েছে দুশ আট কোটি চুয়াল্লিশ লাখ এগারো হাজার ছয়শ পঞ্চাশ টাকা। পাশাপাশি উত্তোলন
করা হয়েছে দুশ পাঁচ কোটি চুরাশি লাখ একাশি হাজার চুরাশি টাকা। তাদের ৯১টি ব্যাংক হিসাবে উনিশ কোটি এগারো লাখ ছত্রিশ হাজার তিনশ চুরানব্বই টাকা স্থিতি রয়েছে। এ ছাড়া ২০টি বাড়ি ও জমির তথ্য পাওয়া গেছে তদন্তে। এর মধ্যে কেরানীগঞ্জে ১৫ কাঠা, মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখানে ১০ কাঠা, শরীয়তপুরের নড়িয়া থানায় ১২ শতাংশ, পালং থানায় ২০ শতাংশ ও ১৪ শতাংশ জমির মালিকানার বিষয়ে সিআইডি তদন্তের মাধ্যমে নিশ্চিত হয়েছে। তাদের আরও ১২৮টি ফ্ল্যাটের সন্ধানও পাওয়া গেছে।
জয় গোপাল সম্পর্কে ডিআইজি ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, তিনি এই ক্লাবের হয়ে একসময় ফুটবল খেলেছেন। এর পর খেলা থেকে অবসর নিয়ে ক্লাবের পরিচালনা পর্ষদের সদস্যপদ গ্রহণ করেন। দুই বছর পর ক্যাশিয়ারের দায়িত্ব পান। ২০১৪ সালে সাধারণ সম্পাদক হওয়ার পর থেকে এনু-রুপনের সঙ্গে তার সখ্য গড়ে ওঠে। এই সূত্র ধরে তিনি তাদের ওই ক্লাবে ক্যাসিনো পরিচালনায় প্রত্যক্ষ সহযোগিতা করেন। ওয়ান্ডারার্স ক্লাবে ক্যাসিনো পরিচালনায় তিনি ছিলেন অন্যতম হোতা।
এনু-রুপনের উত্থানের পেছনে অন্যতম কারিগর হিসেবে জয় গোপাল কাজ করেছেন উল্লেখ করে ডিআইজি ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, এনু-রুপন ২০০৭ থেকে ওয়ান্ডারার্স ক্লাবে ওয়ানটেন খেলা পরিচালনা করতেন। জুয়া তাদের পারিবারিক ব্যবসা। ২০১৪ সাল থেকে ক্যাসিনো ব্যবসা শুরু করেন তারা। তাদের পৃষ্ঠপোষকতা করতেন জয় গোপাল। এনু-রুপনের কিছু এজেন্ট ধরা পড়েছে। তারা ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। তাদের জবানবন্দিতেই ক্যাসিনো গড়ে ওঠার তথ্য রয়েছে।
তাদের ক্যাসিনোতে কারা কারা যেতেন, জানতে চাইলে ডিআইজি বলেন, এনু-রুপনের বিরুদ্ধে চলমান চারটি মানিলন্ডারিং মামলার তদন্ত শেষে চার্জশিট দিচ্ছি। যারা জড়িত, তাদের নাম আমরা মামলার চার্জশিটে রেখেছি।
এনু-রুপনের বড় ভাই রশিদ ভূঁইয়া সম্পর্কে তিনি বলেন, তার সম্পর্কেও আমরা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছি। তাকেও ধরা হবে। ক্যাসিনো থেকে প্রতি রাতে এনু-রুপনের কী পরিমাণ আয় হতো, জানতে চাইলে সিআইডির এ কর্মকর্তা বলেন, প্রতি রাতে বিপুল পরিমাণ অর্থ লেনদেন হতো। তবে কত লেনদেন হতো তার নির্দিষ্ট করে বলা সম্ভব নয়। বুঝতেই পারছেন, যাদের এত সম্পদ থাকতে পারে, তাদের আয় কী পরিমাণ হতে পারে! এত সম্পদ তারা গড়েছেন ২০১৪ থেকে ২০১৯ সালে, লেনদেনও এই সময়েই সবচেয়ে বেশি। দেশের বাইরে তারা সম্পদ পাচার করেছেন কিনা সেটিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তবে অনুসন্ধানে যেটি মনে হয়েছে, তাদের ক্যাসিনোতে অর্জিত অর্থ তারা বাড়ি, ফ্ল্যাট, অলঙ্কারের পেছনে ব্যয় করেছেন। তিনি বলেন, আমরা মূলত তাদের বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিংয়ের মামলা তদন্ত করছি। গে-ারিয়া থানার মামলায় ১৬ জন, সূত্রাপুরের দুটি মামলায় ১৫ ও ১০ জন এবং ওয়ারীর মামলায় ১১ জনের বিরুদ্ধে আগামী মঙ্গলবার অর্থাৎ এক সপ্তাহের মধ্যে আদালতে চার্জশিট দাখিল করব।
উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর পুরান ঢাকার আওয়ামী লীগ নেতা এনামুল হক এনু ও রুপন ভূঁইয়াদের পুরান ঢাকার বানিয়ানগরের বাসায় এবং তাদের দুই কর্মচারীর বাসায় অভিযান চালায় র্যাব। সেখান থেকে পাঁচ কোটি টাকা এবং সাড়ে সাত কেজি সোনা উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় সূত্রাপুর ও গে-ারিয়া থানায় তাদের নামে ছয়টি মামলা হয়। পরে গত ২৫ ফেব্রুয়ারি এনু-রুপনের লালমোহন সাহা স্ট্রিটের বাসায় অভিযান চালায় র্যাব। ওই বাড়ি থেকে ২৬ কোটি ৫৫ লাখ ৬০০ টাকা জব্দ করা হয়। আর ৫ কোটি ১৫ লাখ টাকার এফডিআরের কাগজ এবং এক কেজি সোনা জব্দ করা হয়। এ ঘটনায় দুই ভাইয়ের নামে আরও দুটি মামলা হয়। অন্যদিকে দুর্নীতি দমন কমিশনও এনু-রুপনের বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে পৃথক দুটি মামলা করে। মামলায় এনুর বিরুদ্ধে ২১ কোটি ৮৯ লাখ ৪৩ হাজার টাকার আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের এবং রুপনের বিরুদ্ধে ১৪ কোটি ১২ লাখ ৯৫ হাজার ৮৮২ টাকার আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়। তবে দুদক এখনো আদালতে কোনো প্রতিবেদন জমা দেয়নি। এনু-রুপনের আয়ের বড় উৎস ছিল মতিঝিলের ওয়ান্ডারার্স ক্লাবে ক্যাসিনো ব্যবসা।